বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্প্রতি সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই মাইনগুলো কে পুঁতেছে এবং কেন তা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন।
মিয়ানমারের ভেতরে আরাকান আর্মি এবং জনতা পার্টির মধ্যে চলমান সংঘর্ষে আরাকান আর্মি সীমান্ত এলাকার অনেক অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে, নাইক্যাংশছড়ি এলাকার বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে দুটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে তিনজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
প্রথম ল্যান্ডমাইনটি জামছড়ি পয়েন্টে আসারতলী-ফুলতলী সীমান্তে পিলার নম্বর ৪৬ ও ৪৭-এর কাছে বিস্ফোরিত হয়। দ্বিতীয়টি বলুর পয়েন্টে পিলার নম্বর ৪৯-এর সংলগ্ন এলাকায় বিস্ফোরিত হয়, যেখানে বহু বছর ধরে RICL TMS প্রতিষ্ঠিত ছিল।
স্থানীয়দের বরাতে বিবিসি জানায়, সীমান্তের আরাকান আর্মি দখলকৃত এলাকাগুলো দিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অবৈধ পণ্য পরিবহন চলছে। বিদ্রোহীরা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে এবং পণ্য আনা-নেওয়ার সময় ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ঘুষ না দিয়ে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করার চেষ্টা করছেন এবং এ কারণে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
নাইক্যাংশছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বিজিবি সীমান্তে নিরাপত্তা বজায় রাখলেও কিছু এলাকায় নজরদারি তুলনামূলকভাবে কম। এই সুযোগে স্থানীয়রা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেন, যা এই ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের পেছনে দায়ী।
২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোহিঙ্গারা যখন রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, তখন সীমান্তে পুঁতে রাখা অ্যান্টি-পারসোনেল মাইনগুলো বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটায়। মিয়ানমার সরকার এই মাইনগুলো রোহিঙ্গাদের ফিরে আসা ঠেকানোর জন্য পুঁতেছিল বলে বিভিন্ন মিডিয়ার তথ্য থেকে জানা গেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত সীমান্তে শত্রুপক্ষকে প্রতিহত করার জন্য মাইন পোঁতা হয়। তবে, এমন মাইন পোঁতা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। নিয়ম অনুযায়ী, মাইন পোঁতার সময় নির্দিষ্ট চিহ্ন থাকতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ তা এড়িয়ে চলতে পারে। কিন্তু, গোপনে মাইন পোঁতা সরাসরি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এই পরিস্থিতিতে, সীমান্তে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা এবং স্থানীয় এনজিওগুলোর মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। সীমান্ত নজরদারি জোরদার না করলে এই সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
0 মন্তব্যসমূহ